ছোট গল্প : অপারেশন তাড়াতাড়ি ভাগো ।
লিখেছেন লিখেছেন আমীর আজম ১৭ জুলাই, ২০১৫, ১২:৫৪:২৫ রাত
দুপুর ২:৩০ । বাসের মধ্যে বসে আছে তমাল । একদম চুপচাপ। লোকের ভিড়ে ঠাসাঠাসি অবস্থা।
বিচিত্র স্বভাবের লোকজন। প্রতিটি লোককে গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষন করছে তমাল ।
ঠিক এই মুহুর্তে একটা লোক উঠল। রোগা পাতলা। রুক্ষ চেহারা। চুলগুলো এলোমেলো। চোখগুলো কোঠরে ঢুকে গেছে। কাপড় গুলো ছেড়া আর মলিন। কোলে একটা শিশু। এক সেকেন্ডের মধ্যে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করল তমাল ।
দেখেই মনে হচ্ছে কোন একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বাসে উঠেছে।
হঠাৎ লোকটা শুরু করে দিল : ভাইয়েরা আমার, আমার একমাত্র ছেলে। কঠিন রোগে আক্রান্ত। পেটের মধ্যে টিউমার হয়েছে। অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগে। আমি গরীব মানুষ। এত টাকা কই পাই। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাকে একটু সাহায্য করেন।
বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে কেউ কেউ টাকা দিচ্ছে। বাচ্চাটার পেটে হাত দিল তমাল । কোন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। মুখের দিকে তাকাল। অ্যাপিয়ারেন্স অসুস্থ তো নয়ই, সুস্থও নয়। বরং এটাকে বলা চলে উৎফুল্ল অ্যাপিয়ারেন্স।
অসম্ভব। এই বাচ্চাটার কোন ধরনের রোগ থাকা সম্ভব নয়।
মাথার মধ্যে চিন্তার ঝর বয়ে যাচ্ছে তমালের । সামনে ঈদ। পরিবার পরিজন নিয়ে একবেলা খাওয়ার জন্যই হয়তো এই নাটকটা সাজিয়েছে সে। আচ্ছা কত টাকা পেতে পারে সে। বাসের সবাই যদি সাহায্য করে তারপরেও তো পঞ্চাশ টাকার বেশী হবে বলে মনে হয় না।
কেন জানি লোকটার কাজটা অন্যায় মনে হচ্ছে না। কারণ যে সমাজ ব্যবস্থায় সুদ হালাল আর যাকাত হারাম হয়ে গেছে সেখানে লোকজন এরকম করবে সেটাই স্বাভাবিক।
তবে হ্যাঁ। যাকাত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর যদি কেউ এরকম করে তাহলে সেটা শাস্তি যোগ্য ।
এত কিছু চিন্তা করতে সময় নিলো মাত্র তিন সেকেন্ড ।
তারপর বাচ্চাটার পেট থেকে উঠাল। মানিব্যাগ বের করে একটা পাঁচ টাকার নোট দিয়ে দিল।
বাসের বাকি লোকজন কি বুঝল কে জানে। হুমড়ি খেয়ে সবাই দান করা শুরু করল। মুহুর্তেই লোকটার দুই হাত টাকা দিয়ে ভরে গেল।
নেমে যাওয়ার সময় লোকটা তমালের দিকে তাকালো একবার । চোখে মুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট।
তমাল কিছু বলল না। শুধু একটু মুচকি হাসল। তারপর ইশারা দিয়ে বলল" তারাতারি ভাগো" ।
বিষয়: বিবিধ
১০২৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এসবে অনেকে জেরাও করে ভিক্ষুকটিকে । আমিও এক সময় করতাম বা করার মানসিকতায় ছিলাম ।
এখন আর করি না । বুঝলে দেই না বা কখনও কখনও দিয়েও দিই , কারণ কথায় কথা বাড়বে । কি দরকার বেচারাকে বিব্রত করা ।
তবে যেসব গুলোর চেহারায় হিরুন্চি হিরুন্চি ভাব আছে তাদেরকে এড়িয়ে চলি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন